লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: অবশেষে ১৯ বছর পর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের চূড়ান্তঘণ্টা বাজছে, ভোটের মাধ্যেমে নেতা নির্বাচন করতে চায় তৃণমূলে, অন্যদিকে অনুপ্রবেশ কারিদের প্রার্থীতা নিয়ে হতাশ কাউন্সিলরদের মাঝে । লক্ষ্মীপুর প্রতিনিতি বিএম সাগরের তথ্য চিত্রে বিস্তারিত উপজেলা আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজ মাঠে আগামী ১০ (অক্টোবর) সোমবার অঅওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৯ বছরে ১৩ বার এ শাখার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা হয়নি। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ৩ অক্টোবর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রতিযোগিতা দিয়ে ছবিসহ রঙিন ফেস্টুন, বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার সাঁটিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর-কমলনগর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের বেশির ভাগ গাছ, আলেকজান্ডার বাজার ও আশপাশে ব্যানার-ফেস্টুুনে সয়লাব হয়ে গেছে। নির্মাণ করা হচ্ছে শতাধিক শুভেচ্ছা তোরণ। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের ছবি দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চলছে। এদিকে অন্যদল থেকেআসা অনুপ্রবেশ কারি নেতাদের প্রার্থীতা নিয়ে হতাশাবিরাজ করছে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের মাঝে।
সম্মেলনেকে কেন্দ্র করে দলের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ,ড: আশরাফ আলী চৌধুরী সারু, নাহিদ ফরিদা মুনমুন, মো. মোরশেদ, আবুল কালাম, আবদুর জাহেরসহ ৮ জন ।লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৩ সালে। ওই সময়ে গঠিত ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রায় দু’ডজন নেতাই এখন বেঁচে নেই। যে কারণে, অনেক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই চলেছিল দলটি। এরই মধ্যে ১৩ বার ঘোষণা করা হয়েছিল সম্মেলনের তারিখ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা আর হয়নি। সম্প্রতি আবারও এ শাখাটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী আগামী ১০ অক্টোবর এ সম্মেলনে সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রি-বার্ষিক এ সম্মেলনকে সফল করতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। অন্যদিকে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহৎ এ দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়েও চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা , ভোট না সমঝোতা-কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে শীর্ষ দুই নেতৃত্ব-এ নিয়ে প্রতিনিয়ত হিসাব কষছেন দলটির নেতাকর্মী-সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৩ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেখানে গোলাম মাওলা চৌধুরী সভাপতি ও আবদুল ওয়াহেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে রামগতি বিভক্তি হয়ে নতুন কমলনগর উপজেলা হয়। এরপর রামগতির আওয়ামী লীগের কমিটির একটি অংশ কমলনগর উপজেলা কমিটিতে নাম লেখায়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল গোলাম মাওলা চৌধুরীর মৃত্যুর পর আবদুল ওয়াহেদ মুরাদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। এরই মধ্যে কমিটির বেশির ভাগ নেতা মৃত ও নিষ্ক্রিয়। ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিয়ম রক্ষার জাতীয় ও স্থানীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা।
কাউন্সিলরা বলেন, আমরা চাই- সম্মেলনে যেন কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়। তাহলে প্রকৃত আওয়ামী প্রেমী নেতা কমিটিতে আসতে পারবে।
তারা জানায়, জনবিচ্ছিন্ন এবং বিএনপি ঘরোনায় কেউ কেউ সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন সংগ্রামে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। তাদের অভিযোগ, সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া ড:আশরাফ আলী চৌধুরী সারু এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। তিনি ১৯৯৭ সালে গঠিত জেলা বিএনপির ৫৯ নম্বর সদস্য ছিলেন। ভোল পাল্টে তিনি এখন আওয়ামী লীগ সেজেছেন।
অন্যদিকে আরেক সভাপতি প্রার্থী নাহিদ ফরিদা মুনমুন কখনো আওয়ামী লীগ করেনি। তার পিতা একেএম আজাদ উদ্দিন কামাল বিএনপির রাজনীতি করতো, তার ভাই রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যানও বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তবে এ দুই জনই দাবি করেছেন,তারা আওয়ামী লীগ করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের মধ্যে রয়েছে। দায়িত্ব পেলে দলকে সুসংগঠিত করবেন।
বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুদল ওয়াহেদ বলেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবার আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি। এতোদিন দলকে আগলে রেখেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। আবারও দায়িত্ব পেলে অতীতের ন্যায় দলের জন্য কাজ করে যাব।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ মান্না জানায়, সম্মেলন সফল করার জন্য ছয়টি উপকমিটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই সব কমিটির আলাদা পাঁচটি সভা করে নেতাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি শেষ । তিনি বলেন দলের গঠনতন্ত্র মেনেই রাজ পথে আন্দল সংগ্রামের থাকা ত্যাগী নেতাদেরকে মুল্যায়ন করা হবে। এই ছাড়া অন্যকোন অনুপ্রবেশ কারিদের নেতৃত্বে আশার কোন সুযোগ নাই।