আলোকিত সকাল ডেস্ক
সমুদ্রপথে ইউরোপে মানবপাচারের সঙ্গে দেশজুড়ে অন্তত ১৫টি সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে র্যাব-১ ব্যাটালিয়ন। এ ক্ষেত্রে সড়কপথ ও বিমানপথ ব্যবহার করে লিবিয়ায় পৌঁছানো হয়। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে নৌপথে তিউনেশিয়ার উপকূল হয়ে ইউরোপে পাচার করা হচ্ছে।
বর্তমানে ইউরোপে পাচারে তিনটি ব্যবহৃত পথ হলো :- বাংলাদেশ–ইস্তামবুল (তুরস্ক)-লিবিয়া, বাংলাদেশ-ভারত–শ্রীলঙ্কা (৪- ৫দিন অবস্থান) – ইস্তামবুল (ট্রানজিট) – লিবিয়া এবং বাংলাদেশ – দুবাই (৭-৮ দিন অবস্থান) – আম্মান (জর্ডান) (ট্রানজিট)- বেনগাজী (লিবিয়া)- ত্রিপলি (লিবিয়া)।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইটি পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে র্যাব-১। আটককৃতরা হলো- আক্কাস মাতুব্বর (৩৯), এনামুল হক তালুকদার (৪৬) ও আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া (৩৪)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে র্যাব।
শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, তিন সদস্যের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কতজন সরাসরি জড়িত বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, দেশজুড়ে ১০-১৫ সিন্ডিকেটের খবর পেয়েছি। তাদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীবাহী একটি নৌকা ডুবে অন্তত ৩৯ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ হন এবং জীবিত উদ্ধার হন ১৪ জন। এ ঘটনার পর বিশ্বে নতুন করে সমালোচনায় আসে বাংলাদেশ থেকে নৌপথে মানবপাচারের বিষয়টি।
র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ঘটনার তদন্তে গিয়ে ইউরোপে মানবপাচারের সঙ্গে দেশজুড়ে অন্তত ১০-১৫টি চক্রের তথ্য পেয়েছে। তারমধ্যে ৫-৬টি চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া বাংলাদেশিরা সেদিন নৌ-দুর্ঘটনায় পতিত হন।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ভিকটিমদের পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকিট ক্রয় এই সিন্ডিকেটের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। ইউরোপে পৌঁছে দিতে তারা ৭-৮ লাখ টাকা অর্থ নির্ধারণ করে। যার মধ্যে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লিবিয়ায় পৌঁছানোর আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাত্রার আগে পরিশোধ করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। এর মধ্যে অধিকাংশ টাকা পরিশোধ হয়ে যায়, ফলে ইচ্ছা থাকলেও আর ফেরত আসতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।
তিনি বলেন, গত ৯ মে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের নৌকাডুবিতে প্রায় ৮৫-৯০ জন নিখোঁজ হন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩৯ জন। এ ঘটনার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিমের স্বজনরা শরীয়তপুরের নড়িয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় দুটি মামলা করেছেন।
ভিকটিমরা ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কথিত গুডলাক ভাইসহ আরও কয়েকজন এজেন্ট তাদের গ্রহণ করে। তাদের ত্রিপলিতে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করানো হয়। এ সময়ে ভিকটিমদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে চক্রটি। সেখানকার সিন্ডিকেট সমুদ্রপথে অতিক্রম করার জন্য নৌ-যান চালনা এবং দিক-নির্ণয় যন্ত্র পরিচালনাসহ আনুসাঙ্গিক বিষয়ের ওপর নানাবিধ প্রশিক্ষণ দেয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভোররাতে একসঙ্গে কয়েকটি নৌ-যান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেলের হয়ে ইউরোপের পথে রওনা দেয়। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে গমনকালে ভিকটিমরা ভূমধ্যসাগরে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
আস/এসআইসু