আলোকিত সকাল ডেস্ক
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উৎসব উদযাপনে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের দিকে ছুটছে ঘরমুখী মানুষরা। সবার মুখে একটাই কথা বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করা। সড়ক, নৌ এবং রেলপথে ঘরে ফিরতে ভোগান্তি আছেই। তারপরেও প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে ভোগান্তির কষ্ট অনেকটাই কমে যায় বলে জানান দিনাজপুর গামী কয়েজন যাত্রী রহিমা বেগম ও তার স্বামী লিয়াকত আলী।
এবার ঈদকে ঘিরে রাজধানী থেকে বাড়ি ফিরছেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ। শুক্রবার (৩১ মে) সকাল থেকেই এ যাত্রা ঈদযাত্রা বিরতিহীন ভাবে চলছে। রাজধানী থেকে বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশনে রাত অবধি তিল ঠাঁই নেই। কেউ গাড়ি বিলম্বের কারণে স্টেশনে অপেক্ষা করছেন কেউবা যানজটের কারণে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ।
খুলনা গামী ছালমা ইসলাম দৈনিক জাগরণকে জানান, ঈদে রাস্তায় চলাচলের মধ্যেও যেন আনন্দ আছে। কষ্টকে আনন্দ ভেবে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে বলে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদযাত্রায় ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চার সিটি করপোরেশন এলাকাসহ তিন জেলা ছেড়ে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
এ সব মানুষ রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথ ব্যবহার করে বাড়ি যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, ঈদে স্বজনদের সান্নিধ্য প্রত্যাশীরা গত কয়েকদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে ঘরমুখী হতে শুরু করলেও মূল ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। এ যাত্রা চলবে আগামী বুধবার (৫ জুন, সম্ভাব্য ঈদের দিন) পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক ঈদে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ঘরমুখী মানুষের সিংহভাগেরই চাপ পড়ে রাজধানী ঢাকার রেলস্টেশন এবং লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোর ওপর। আমাদের সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থায় মাত্র ৬ দিনে এতো বিপুলসংখ্যক মানুষের চাপ সামাল দেয়ার সক্ষমতা নেই। তাই ঈদ যাত্রীদের মোটেও দুর্ভোগ হবে না এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন না। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পাশাপাশি সড়ক ও নৌ-দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো রয়েছে। তাই নিরাপদ ঈদযাত্রার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুত্রবার সাংবাদিকদের বলেন, এবারের ঈদযাত্রা হবে আগের তুলনায় স্বস্তিদায়ক। সড়কে কোথাও যানজট নেই।
মন্ত্রী বলেন, মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, বিআরটিএ ভিজিলেন্স টিম, মোবাইল কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে যেন ঈদে মানুষ ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারেন। সড়কে যাতে যানজট না হয় সেজন্য গাড়ি চালকদের দায়িত্ব বেশি। চালকরা যাতে অধৈর্য না হন, রমজানের সংযম যেন সড়কে গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে ধরে রাখেন সেজন্য মালিকপক্ষের উচিত চালকদের কাউন্সেলিং করা।
যাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঘরমুখী মানুষের মধ্যে শঙ্কাও দেখা গেছে। শুক্রবার থেকে গাবতলী বাস কাউন্টারগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ভিড় আরও বাড়তে থাকে। বাবা-মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট শিশুদের কাউন্টারে বসে থাকতে দেখা যায়। এদিন গাবতলীতে স্বল্প দূরত্বের মানুষের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস কাউন্টার থেকে সকাল ৮ থেকে ৯টা, বেলা ২ ও ৩ টার দিকে বিভিন্ন রুটের বাসযাত্রীদের নিয়ে বাসগুলো যথাসময়ে ছেড়েছে। যাত্রাপথে তেমন কোনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।
গাবতলী হানিফ বাস কাউন্টারে কথা হয় নওগাঁও রুটের যাত্রী আলিয়ার রহমানের সরঙ্গ। তিনি বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে শিকড়ে ফিরছি। সড়ক মেরামত হয়েছে, নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে। এবার যানজট নয়, স্বস্তির যাত্রা হবে আশা করা যাচ্ছে। কিন্তু মনের মধ্যে এখনও অতীতের ভোগান্তির প্রভাবটা বেশি।
ঢাকা পিরোজপুর রুটের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী সুরভী আক্তার বলেন, সকালে মন্ত্রী এসেছিলেন। বলে গেলেন, সড়কে এবার যানজট নেই। স্বস্তির যাত্রা হবে। মন্ত্রী প্রতি বছরই তো বলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যানজটে নাকাল হতে হয়। আশা করছি, এবার মন্ত্রীর কথা মতো যানজট থাকবে না।
এসআর পরিবহনের রংপুরের যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবার নিয়ে এবার বাড়ি যাচ্ছি। মেয়ের মনে অনেক আনন্দ টের পাচ্ছি। অনেকদিন পর দাদা-দাদির দেখা পাবে। এছাড়া নানার বাড়িও কাছে। শুধু রাস্তায় যানজটটা না হলেই হয়।
ঈদ আসলেই টিকিট প্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখী মানুষদের। এবারও যেন চিরচেনা সেই রূপ। ঈদযাত্রার প্রথম দিন বেশির ভাগ ট্রেনই বিলম্বে ছেড়েছে। ফলে ভোগান্তি হলেও তা মেনে ঘরে ফিরছেন মানুষ। ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে শনিবার কমলাপুরে দেখা যায় জনস্রোত। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকিট কেটেছেন তারা আজ ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়ছেন। ভোগান্তির ধারাবাহিকতায় ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে কমলাপুরে প্রতিটি মানুষকে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাঙ্ক্ষিত ট্রেন একটি দেখা মেলেনি।
কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় রংপুর এক্সেপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্টেশনে পৌঁছায়নি। কিন্তু সে সময়ও ট্রেনটি ছাড়তে পারবে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়তে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা। বিলম্বে ট্রেন ছাড়ার বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, যে ট্রেনগুলো দেরিতে কমলাপুরে পৌঁছাচ্ছে, সেগুলো ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। ঢাকা থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে ৯টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ কিছুটা কমেছে। বরিশালের উদ্দেশে ঢাকা থেকে মাত্র ৩টি লঞ্চ ছেড়ে যায়।
বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বরিশাল রুটে ৩টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বাড়তি যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে দেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার ৪৩টি নৌ-রুটে ২১৫টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে বিশেষ সার্ভিস দেয়ার জন্যও প্রস্তুত।
আস/এসআইসু