আলোকিত সকাল ডেস্ক
১০ ওভারে ৭১ রান খরচায় কোনো শিকার নেই। ইংল্যান্ডের রানোৎসবের দিনে বাংলাদেশের অন্য বোলারদের মতো সাকিব আল হাসানেরও বোলিংয়ে বাজে দিন গেছে। তবে দিনের শেষে এটিও বলার উপায় নেই যে তাঁর দিনটি একতরফা খারাপই ছিল। ব্যাট হাতে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ সেঞ্চুরি করে শনিবার কার্ডিফে ব্যর্থতা-সাফল্যের এক মিশ্র দিনই পার করেছেন এ অলরাউন্ডার। টানা দুই ফিফটির পর সেঞ্চুরিতে ২৬০ রান করে আপাতত এ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ২৬০ রানও তাঁর নামের পাশে। তবে এখানেই শেষ নয়, ওয়ানডের বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সের দ্যুতি আরো ছড়াবেন বলেই বিশ্বাস সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের, ‘আমার তো মনে হয়, এই বিশ্বকাপে সাকিব ভাই আরো চমক দেখাবেন।’
স্নেহের সতীর্থের বিশ্বাসের সঙ্গে বাস্তবতাও এক সুতায় গাঁথা হলে বাংলাদেশের পরের পর্বে যাওয়ার স্বপ্নও নিশ্চিতভাবেই আরো রঙিন হবে। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় আরো কয়েকজনের পারফরম্যান্সও, তাহলে তো কথাই নেই। ইতিবাচক ব্যাপার হলো, পারফরমার সাকিবের মাঝ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে নিচ্ছেন সতীর্থরাও। বিশেষ করে তরুণ মিরাজের কাছে পারফরম করার ‘দাওয়াই’ও হয়ে উঠেছেন সাকিব, ‘সাকিব ভাই এমন একজন ক্রিকেটার, যাঁর সব কিছুই অনুসরণ করার মতো। আমি তাঁর কাছ থেকে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই। তাঁর বোলিং অনুসরণ করি সব সময়। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে যা দারুণ সাহায্য করে। আমার মতো তরুণ ক্রিকেটারদের তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই।’
এমনকি ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে বিদায় করার উপায়ও নাকি মিরাজকে বাতলে দিয়েছিলেন সাকিবই। ১২১ বলে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলার পথে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেওয়া রয় আউট হওয়ার আগে ছাড় দেননি তরুণ এই অফস্পিনারকে। টানা তিন ছক্কায় ছিন্নভিন্ন হতে থাকা মিরাজই শেষ পর্যন্ত থামান রয়কে। সাকিবের পরামর্শই তখন হয়ে ওঠে এই ইংলিশ ওপেনারকে থামানোর মহৌষধও। সেই গল্পই মিরাজ বলছিলেন এভাবে, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ওভারে তিনি (রয়) তিন-তিনটি ছক্কা মারেন আমাকে। ক্রিকেটে অবশ্য এমন হতেই পারে। ওই সময়ই সাকিব ভাই এসে বললেন, ‘সে যদি উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতেই থাকে, তাহলে একটু বাইরে বল করে দেখ।’ আমিও সেটিই চেষ্টা করলাম এবং রয়ের উইকেটও পেয়ে গেলাম।’’
মিরাজ পেয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগ্যানের উইকেটও। ১০ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া এই অফস্পিনারের পারফরম্যান্সকে স্কোরবোর্ডে ইংলিশদের জমা করা ৩৮৬ রানের তুলনায় ভালোই বলতে হয়। ঝড়ঝাপটা সামলে মিরাজ সেদিন বাংলাদেশের সেরা বোলারই। সোজাসুজি কার্ডিফের মাঠের তুলনামূলক ছোট্ট সীমানার কারণে সেখানে স্পিনারদের জন্য ছিল বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এ কারণে একাদশ থেকে স্পিনার মঈন আলীকে ছেঁটে ফেলে বাড়তি একজন পেসারও নামায় ইংলিশরা। বাংলাদেশ যদিও রণসজ্জা না বদলে আস্থা রাখে স্পিনারদের ওপরই। এমনকি আগের দিনের বৃষ্টিতে উইকেট ঢাকা থাকায় শুরুর দিকে পেসারদের বাড়তি সুবিধার কথা বিবেচনায় বাংলাদেশ অধিনায়ক টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন বলে মনে হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু এ উইকেটেও সাকিবকে দিয়েই বোলিং শুরু করান মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেই সাকিবকেই একপর্যায়ে ধুঁকতে দেখে নিজেদের ভবিতব্যও বুঝে গিয়েছিলেন মিরাজরা। ম্যাচ শেষে অকপটে সে কথা বলেছেনও, ‘সাকিব ভাই যখন বল করছিলেন, তখনই বুঝতে পারছিলাম যে এই উইকেটে আমাদের কতটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।’
সেই পরীক্ষায় রয় ও মরগানকে ফেরানো মিরাজকে উত্তীর্ণই বলা যায়। অলরাউন্ডার সাকিব ব্যাট হাতে একটু বেশিই আলো ছড়ালেও বোলিংয়ে তাঁকেও পেছনে ফেলেছেন এই তরুণ অফস্পিনার। সাকিবের ৩ উইকেট, আর ৫ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত দলের সেরা স্পিনার মিরাজই। ইংল্যান্ডের কাছে হারে সব শেষ হয়ে গেছে বলেও মনে করেন না তিনি, ‘এটা বড় কোনো ধাক্কা নয়। যদিও আমরা দুটো ম্যাচ হেরে গেছি। তবে এখনো ছয়টি ম্যাচ বাকি আমাদের। পরের দুটি কিংবা তিনটি ম্যাচে ভালো করলেই আমাদের আরো সামনে এগোনোর সুযোগ থাকবে।’ সামনে এগোনোর পথে মিরাজের মতো দলের অন্যরাও সাকিবের পারফরম্যান্সেই খুঁজছে অনুপ্রেরণা।
আস/এসআইসু