আলোকিত সকাল ডেস্ক
ময়মনসিংহে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রাপ্তদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেকের বাবা নেই আবার কারো মা নেই। জীবনের সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে খেয়ে না খেয়ে আবার কখনো আধাপেট খেয়ে কোন রকমে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। টেনে হেছড়ে লেখাপড়া চালিয়ে সরকারী চাকরী পাবে তা কোন দিন ভাবেনি। সরকারী চাকরী সোনার হরিণ। চলতি জুলাই মাসে ময়মনসিংহ পুলিশে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ২৮ পরিবার একেবারেই সহায় সম্বলহারা নিঃস্ব। বিনা পয়সায় সোনার হরিণ হাতে পেয়ে এ সকল নিঃস্ব পরিবার ও তাদের সদস্যসহ অনেকের চোখেই ছিল আনন্দাশ্র“।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২৫৭ নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষকের ছেলে ৭৬জন, নিজের সামান্য এবং পরের জমি মিলিয়ে কৃষিকাজ করে এমন পরিবারের সন্তান ১৮জন, অন্যের জমি বর্গাচাষ করে এমন পরিবারের সন্তান ৩০, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সন্তান ১০, দিন মজুরের সন্তান ৩ জন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজিবীর সন্তান ৪, কর্মরত পুলিশ সদস্যের সন্তান ১৭, শিকের সন্তান ৪, বাবুর্চির সন্তান ২, গ্রাম পুলিশের সন্তান ১, অটো চালকের সন্তান ২, একমাত্র মুক্তিযোদ্ধার ভাতার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সন্তান ১২, চা বিক্রেতার সন্তান ১, কাঠ মিস্ত্রীর সন্তান ৩, কলা বিক্রেতার সন্তান ১, রিক্সা চালকের সন্তান ৪, সবজি বিক্রেতার সন্তান ৫, রং মিস্ত্রীর সন্তান ১, গামেন্টর্সকর্মী ৫, তাত শ্রমিক ১, সরকারী চাকুরীজিবীর সন্তান ৬, বেসরকারী চাকরীজিবীর সন্তান ৮, প্রবাসীর সন্তান ৫, পল্লী চিকিৎসকের সন্তান ৩, মুদি দোকানদার ৫, স্কুলের দপ্তরীর সন্তান ২, গাড়ীর হেলপাড় ১, সেলুেনর কাজ করে এমন পরিবারের সন্তান ১, প্রার্থী নিজে টিউশনি করে পরিআর চালায় এমন সন্তান ১, প্রার্থী নিজে গার্মেন্টকর্মী ১জন। অপরদিকে কৃষি, বর্গাচাষী, ুদ্র ব্যবসায়ী, দিন মজুর, অবঃ পুলিশ সদস্য, কর্মরত পুলিশ সদস্য, শিক, কাঠ মিস্ত্রিী ও ফল বিক্রেতা পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে আরো ৪৫জনকে অপেমান তালিকায় রাখা হয়েছে বলে পুলিশ সুত্র জানায়।
খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এ সকল সহায় সম্বলহারা পুলিশ কনস্টেবল হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্তরা হলো, তারাকান্দার রামপুরের সেলুনে কাজ করা পিতা সুবল বিশ্বাসের ছেলে উজ্জল বিশ্বাস, মুক্তাগাছার রামপুর গ্রামের দিনমজুরের ছেলে সবুজ মিয়া, সদরের গোষ্টা দণিপাড়ার টং দোকানে চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের ছেলে খাইরুল কবির, সদরের রিক্সা চালক উমর ফারুকের মেয়ে ফারজানা আক্তার সুমি, সদরের বেগুনবাড়ির বর্গাচাষী আরশেদ আলীর ছেলে মাসুদ মিয়া, সদরের চরজঙ্গলদী গ্রামের গ্রামের বর্গাচাষী তাজুল ইসলামের ছেলে মু মোহাইমিনুল ইসলাম, বিদ্যাগঞ্জের বর্গাচাষী আক্কাছ আলীর ছেলে মোজাম্মেল হক, মাঝিহাটির বর্গাচাষী গোলাম মোস্তফার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সাব্বির, চরনীলয়িার শ্বশুর বাড়িতে আশ্রিতা ছোট বাজারে বই খাতা বাধানোর কাজ করা শফিকুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা, ফুলবাড়িয়ার বৈলাজানের বর্গাচাষী কুদ্দুছ আলীর ছেলে রুবেল আহম্মেদ, মুক্তাগাছার রঘুনাথপুরের দিনমজুর আব্দুল জলিলের ছেলে জহিরুল ইসলাম, ফুলবাড়িয়ার দেবগ্রামের অবঃ পুলিশ সদদ্য আব্দুর রশিদের ছেলে আমিনুল ইসলাম, ভালুকার অবঃ পুলিশ সদস্য মাহতাব উদ্দিনের ছেলে রাকিবুল হাসান আকাশ, সদরের দড়িভাবখালীর গ্রাম পুলিশ গোপাল রবিদাসের ছেলে সুশীল রবিদাস, সদরের গন্দ্রপার অটো চালক মাসুদ শেখের মেয়ে শ্রাবণী আক্তার, একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভাতার উপর নির্ভরশীল মুক্তাগাছার বনবাংলা গ্রামের কেরামত আলী খানেরর ছেলে ইমন খান ও ঘাটুরী গ্রামের সফর আলীর ছেলে শাকিল আহম্মেদ, বিদ্যাগঞ্জের সবজি বিক্রেতা সুরুজ আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, খাগডহরের সবজি বিক্রেতা জালাল উদ্দিনের ছেলে হৃদয় হাসান,শহরের ভাটিকাশরের গার্মেন্টকর্মী সিরাজুল ইসলামের ছেলে ফাহিমূল ইসলাম, মুক্তাগাছার ঘোষবাড়ি গ্রামের কলা বিক্রেতা ইব্রাহিমের ছেলে ফাহিম মিয়া, ফুলবাড়িয়ার পলাশতলীর কাঠমিস্ত্রী ইদ্রিস আলীর মেয়ে রাবিয়া খাতুন, ভালুকার তালাব গ্রামের টং দোকানে মুদি দোকানী প্রিয় কুমার বর্মণের মেয়ে পপি রানী বর্মন, ভালুকার ছিটাল গ্রামের সহিদুল ইসলামের মেয়ে সাজেদা আক্তার সুমি, মুক্তাগাছার কাঠালিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রিনী আক্তার, সদরের চর ঘাগড়ার হেলপাড় হযরত আলীর মেয়ে নুসরাত জাহান রিপা। এছাড়া অসহায় মা বাবা পরিবারের গ্লানি টানতে কোন উপায় না পেয়ে গার্মেন্টে কাজ করতে থাকাবস্থায় ফুলবাড়িয়ার কাহালগাওয়ের সুরুজ আলীর মেয়ে গার্মেন্টকর্মী ফরিদা আক্তার এবং পরিবারকে টানতে গিয়ে অসহায় বাবা মায়ের পাশে দাড়াতে গিয়ে নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করে সংসার চালানো মেয়ে রিফা তামান্না। সে ভালুকার রাজৈ গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজ। বিনা পয়সায় আমার ছেলের চাকরি হয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরী হয় এটা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমি কোন দিন কল্পনাও করিনি যে টাকা ছাড়া আমার ছেলের চাকরী হবে। ছেলে মাসুদ কোন দিন সরকারী চাকরী করবে এটা ভাবিনি। যা এত আমার বিশ্বাসই হতো না। মাসুদের পিতা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ময়মনসিংহ শহরের ছোট বাজারে সামান্য পয়সায় বই খাতা বাধানোর কাজ করে কোনভাবে টেনে হিছড়ে সংসার চালাই। আমার এক ছেলে তিন মেয়ে। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। অন্য দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে টানাটনির সংসার। ছেলে মাসুদের কোন কিছু না হওয়ায় তিনি শহরেরই একটি কম্পেটারের দোকানে কাজ করতে দেন। অর্থের কারণে তাও প্রতিদিন আসা সম্ভব হয়নি। মাসুদের পিতা আরো জানান, তার বসতবাড়ির কোন জমি নেই। তিনি শ্বশুড়বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর নিলয়িায় ঘর করে কোনভাবে বসবাস করছেন। এরই মাঝে বিনা পয়সায় পুলিশে চাকরী হওয়ায় তিনি সরকার ও পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেছেন।
মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে ওদরে। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। কথা বলতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। আমরা দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবো। বিনা পয়সায় চাকরী পেয়ে এভাবেই তাদের অভিব্যক্তি ও অনুভুতি প্রকাশ করে
আস/এসআইসু