আলোকিত সকাল ডেস্ক
কোনো রকম বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই বিদ্যুৎ খাতের কাঁচামাল আমদানির বিপরীতে নেওয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ খাতের কাঁচামাল জ্বালানি তেল আমদানির মূল্য পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ বিলম্বে মূল্য পরিশোধ সুবিধার আওতায় এ খাতের উদ্যোক্তারা আগে ১৮০ দিনে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময় পেলেও এখন তা বাড়িয়ে ৩৬০ দিন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতেই ন্যূনতম বিশ্লেষণ ছাড়াই তড়িঘড়ি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য পর্ষদকে প্রভাবিত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলম্বে মূল্য পরিশোধ সুবিধায় (বাকিতে) বিদেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ করে দেয়। যে কোনো শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করলে ১৮০ দিনে বা ছয় মাস এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করলে ৩৬০ দিন বা এক বছরের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। গত বছরের শেষভাগে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য পরিশোধের সময় বাড়িয়ে ৩৬০ দিন করা হয়। তবে ওই খাতে এ সুবিধা দেওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি আন্ত মন্ত্রণালয় কমিটি করে প্রয়োজনীয় বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট অ্যাকাউনটেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রতিনিধি রাখা হয়েছিল। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ওই খাতে সুবিধা বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের এ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিটি গঠন দূরের কথা, বিশেষজ্ঞ কাউকে দিয়ে ন্যূনতম বিশ্লেষণ পর্যন্ত করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যের অযাচিত হস্তক্ষেপে অনেকটা তড়িঘড়ি করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ প্রক্রিয়ায় আমদানির বিপরীতে নেওয়া ঋণকে বলে সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট বা সরবরাহ ঋণ, যা হার্ড লোন হিসেবে পরিচিত। এ ঋণের সুদ নির্ধারণ হয় বাজার রেটে। অর্থাৎ লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার বা লাইবরের সঙ্গে যোগ করে সুদ নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে এ ঋণের কার্যকর সুদহার তুলনামূলক বেশি হয়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত যেসব খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় নেই, সেসব খাতে বৈদেশিক ঋণ উৎসাহিত করা ঠিক নয়। আর যদি খুব প্রয়োজনই হয় তবে যাচাই-বাছাই ও বিচার বিশ্লেষণ করে দেওয়া যেতে পারে। আমি মনে করি কোনো বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে এ ছাড় দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতে এ ধরনের ছাড় দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না। কারণ কখনোই এ খাতের উদ্যোক্তারা কম দামে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছেন না। ফলে এই ছাড়ের ফলে ভোক্তা নয়, প্রতিষ্ঠানের মালিকরাই লাভবান হবেন। তা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় কোনো আয়ও নেই তাঁদের। ফলে এই ঋণ শোধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হবে।’
আস/এসআইসু