আলোকিত সকাল ডেস্ক
খালেদা জিয়ার কারাবন্দি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেও পরিস্থিতির খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না। বরং দলীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা, সদস্যদের মধ্যে আস্থার সংকট, পরস্পরের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস, দীর্ঘদিন ধরে পাঁচটি পদ শূন্য থাকাসহ নানা কারণে এ কমিটির সক্ষমতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের প্রকাশ্য বিতর্কের ঘটনা ঘটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ কমিটির সদস্যদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে এসব সংকট দ্রুত কেটে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে থাকায় সাময়িক এ সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আশা করি শিগগিরই এ সংকট কেটে যাবে।
সূত্রমতে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গেল বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু তিনি বিদেশে অবস্থান করায় দলীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশ জটিলতা দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসলেও দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ীই সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এতে ওই কমিটির সদস্যদের গুরুত্ব কমতে থাকে।
সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদে বিজয়ী বিএনপির এমপিদের শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। সদস্যদের না জানিয়েই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। তারেক রহমানের পাশাপাশি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে নিয়েও অনেকের মাঝে সন্দেহ-অবিশ্বাস দেখা দেয়। এ ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে দীর্ঘ দেড় মাস পর ১৫ জুন অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতাদের বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ নেয়। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে কয়েকটি ইস্যুতে দুই নেতা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কিছু না বললেও পরে এক নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, সংসদে যাওয়া, সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন এবং বগুড়া উপনির্বাচনে অংশগ্রহণসহ কয়েকটি বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক নেতা। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়। এ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই আগামী শনিবার পর্যন্ত বৈঠকটি মুলতবি করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে নেতাদের এ বিরোধ মিটে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
পাঁচটি পদ শূন্য : বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯টি পদের মধ্যে পাঁচটিই শূন্য রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত সর্বশেষ এ কমিটিতে শুরু থেকেই দুটি পদ ফাঁকা রয়েছে। পরে বিভিন্ন সময়ে এ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে মোট শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচটিতে। খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব, তারেক রহমানের বিদেশে অবস্থান ছাড়াও বেশ কয়েকজন সদস্য অসুস্থতাসহ নানা কারণে অনেকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছেন। যে কারণে অল্প সংখ্যক সদস্য নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সর্বশেষ শনিবারের বৈঠকে মাত্র সাতজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, খালেদা জিয়া যেদিন জেলে গিয়েছিলেন সেদিনই আমি বিএনপি নেতাদের বলেছিলাম যে, কাউন্সিল ডেকে কমিটি করা হোক। কিন্তু তারা তা করেনি।
তিনি তারেক রহমানের নেতৃত্বের সমালোচনা করে বলেন, তারেক জিয়া বিএনপির এমপিদের সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা সঠিক নিয়েছে। সে একটি ভালো কাজ করেছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় এ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে তা খারাপ। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এটি করতে পারত। যেভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে তা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জন্য অপমানজনক। এ জন্য শুধু ক্ষোভ প্রকাশ নয়, সদস্যদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পাঁচটি পদ শূন্য থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে এটি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সময়-সুযোগমতো এটি পূরণ করা হবে। চেয়ারপারসন জেলে না থাকলে আরও আগেই এটি পূরণ হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আস/এসআইসু