আলোকিত সকাল ডেস্ক
চলচ্চিত্র মানে পূর্ণ বিনোদন। দর্শক বিনোদন পেতেই সিনেমা হলে যায়। আর কৌতুক হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। ফলে কৌতুক ছাড়া একটি চলচ্চিত্র পূর্ণতা পেতে পারে না। কিন্তু এখনকার অভিনয়শিল্পীরা কৌতুকের মতো কঠিন কাজটি একদমই করতে পারছেন না।
ফলে এই চরিত্রে নতুন করে কেউ আসছেন না। সর্বশেষ দিলদারই ছিলেন। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে একচেটিয়া দাপুটে অভিনয় করে গেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে দিলদার থাকা মানেই দম ফাটানো হাসি!
পর্দায় তার উপস্থিতি মন ভালো করে দিত সবার। শুধু যে হাসাতে পারতেন তা কিন্তু নয়, মুহূর্তে আপনাকে কাঁদিয়েও ফেলতে পারতেন এই জাত অভিনেতা। এখন সবার ঝোঁক নায়ক-নায়িকা হওয়ার প্রতি।
এ ছাড়া নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে বলে অনেকে আলাদা করে কৌতুকের দৃশ্য বা কৌতুকশিল্পী নিতে চায় না। তবে এ কথা মানতেই হবে, দর্শককে পূর্ণ বিনোদন দিতে কৌতুক বা কৌতুক অভিনেতার বিকল্প নেই।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি যুগে একটা বড় অংশ জুড়ে থাকত ‘কৌতুক’ পর্ব। তখন চলচ্চিত্রের অপরিহার্য অংশ ছিল ‘কৌতুক’। আমাদের নিত্যদিনের জটিলতায় জীবন যখন নাভিশ্বাসে উঠে যায়, ঠিক তখন একটু হাসি এনে দিতে পারতেন দিলদারের মতো অভিনেতারা। একজন কৌতুক অভিনেতা নায়ক বা খলনায়কের চেয়ে কোনো অংশে কম নন।
শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নয়, বিশ্বের সব দেশের চলচ্চিত্রে একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে কৌতুক পর্ব। কিন্তু নির্মম সত্য এটা যে, ঢাকাই চলচ্চিত্র আজ তার জৌলুস হারিয়েছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কৌতুকের মতো বড় চরিত্রগুলো। সূচনালগ্নে যারা আমাদের চলচ্চিত্রে দর্শকদের হাসির খোরাক জুগিয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন আমাদের মাঝে নেই।
কেউ চলে গেছেন না ফেরার দেশে, কেউ আবার অভিমানে সরে গেছেন। এমনকি নতুন করে জন্ম নিচ্ছে নাÑ সোনা মিয়া, ফ্যাটি মহসিন, সাইফুদ্দিন, হাসমত, পরান বাবু, মতি, বেবী জামান, ব্ল্যাক আনোয়ার, খান জয়নুল, রবিউল, আনিস, টেলি সামাদ, দিলদার, কাজল, সুরুজ বাঙালী, আফজাল শরীফ, ববি, জ্যাকি আলমগীরের মতো কৌতুক অভিনেতা।
আশি ও নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতা মানেই ছিলেন দিলদার। অঘোষিতভাবে তিনি বাংলা কমেডির রাজপুত্র বনে গেয়েছিলেন। দিলদারের জনপ্রিয়তা এমন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, তাকে নায়ক করে ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়।
ওই চলচ্চিত্রে একজন লোক হাসানো মানুষের খোলস ছেড়ে তিনি হাজির হয়েছিলেন অন্যরূপে। দর্শক তার অভিনয় দেখে যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনি দিলদারও দেখিয়েছেন চরিত্রের বৈচিত্র্য।
এই অভিনেতার মৃত্যুর পর যে শূন্যতা দেখা দিয়েছিল, তা আজও পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কেন এমন হয়’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। দিলদারের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘প্রিয়জন’, ‘বিচার হবে’, ‘বীরপুরুষ’ প্রমুখ। ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০০৩ সালে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৪৫ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া এই গুণী অভিনেতা মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ২০০৩ সালের আজকের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন।
আস/এসআইসু