ইন্টারনেটকে পূঁজি করে আব্দুল কাইয়ুমের ব্ল্যাকমেইলিং ব্যবসা

বদরুল আমীন, ময়মনসিংহ ব্যুরো

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম। ছাত্রজীবনে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত ছিলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বে।

সেই সংগঠনের সূত্র ধরেই কাইয়ুমের উত্থান। ছাত্রশিবিরে বিশেষ অবদান রাখায় সংগঠনের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সাথে গড়ে ওঠে তার বিশেষ সখ্যতা। সংগঠনটি সিনিয়র আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তাকে তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে গড়ে তোলে।

আইসিটি তালিম নিয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ফিরে আসে নিজ উপজেলা ঈশ্বরগঞ্জে। ঈশ্বরগঞ্জের রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, সমাজের সন্মানী মানুষ , বিত্তশালী , স্থানীয় সাংবাদিকদের নামে ফেসবুকে বিভিন্ন ভুয়া আইডি ও পেজ খুলে এবং ওয়েব সাইটে বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশের নামে ঐসব লোকদের নামে ভুয়া, মনগড়া সংবাদ, কুরুচিপূর্ণ ছবি প্রকাশ করে।

এছাড়াও ইউটিউবে নিজেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অফিসার , সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রেকডিং আদায় এবং তা প্রকাশ করত। প্রকাশের পর ঐসব লোকদের মাঝে ভীতি সঞ্চয় করে হুমকি দিত। মোটা অংকের টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না পেলে ছবি ও ভিডিও এডিটিং করে আরো মড়িয়া হয়ে অপপ্রচার করতো। মানসন্মানের ভয়ে তার দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেছেন অনেকেই।

এভাবেই ঈশ্বরগঞ্জ থেকে আব্দুল কাইয়ুমের উত্থান শুরু।

ক্রমশ: নেটওয়ার্ক বাড়তে থাকে কাইয়ুমের। উপজেলা শহর থেকে অবস্থান নেয় ময়মনসিংহ জেলা শহরে। এই শহরে জামায়েত ইসলামী সমর্থিত একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নেয় কাইয়ুম। ঐ প্রতিষ্ঠান থেকেই ময়মনসিংহ শহরের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তার গড়া ওয়েবসাইটগুলিতে একই কায়দায় ভুয়া সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে।

ব্ল্যাকমেইল করা ঐসব সংবাদ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সন্মানী মানুষ ভুক্তভোগীরা। একপর্যায়ে তার দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করে পরিবার ও সমাজের মানুষ থেকে মানসন্মান বাঁচাতে তারা কাইয়ুমের হাতে তুলে দেন লাখ লাখ টাকা।

কাইয়ুম এতটাই ধুরন্ধর (ধূর্ত) প্রকৃতির যে, সে যার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করত তার নিকটজনরা ঐ সংবাদ প্রকাশ করেছে বলে প্রচার করতো। এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তি নিজের অর্থাৎ কাছের মানুষজনদের ভুল বুঝত। এতে সন্মানী ঐব্যক্তিটি তার প্রিয় মানুষটিকে শত্রু ভাবত এবং বন্ধু ভাবাপন্ন মানুষটির ক্ষতি করত। এসবছিল কাইয়ুমের কূট কৌশলের নমুনা।

এদিকে ফেসবুক ও ওয়েবসাইটে বিভিন্ন নামে ভুয়া পেজ খুলে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে এই প্রতারক আব্দুল কাইয়ুমকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ।

শনিবার তাকে ২শ’ ডলারসহ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এব্যাপারে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি আজিজুর রহমান।

আব্দুল কাইয়ুমের প্রতারণার শিকার এমনই একজন। তিনি মোমেনশাহী ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. ইদ্রিস খান।

আমাদের কন্ঠকে ড. ইদ্রিস খান জানান, এই কাইয়ুম অনেকদিন ধরেই আমাকে টার্গেট বানিয়ে আমার নামে কুরুচিপূর্ণ ছবি, মনগড়া ইন্টারভিউ, মিথ্যা ও বানোয়াট রিপোর্ট লিখে ফেসবুকে ও ইউটিউবে প্রচার করে। একটি ছবিতে সে আমাকে যৌনপল্লীর নারীদেও ছবি আমার সাথে জোড়া লাগিয়ে অপপ্রচার করে।

এইসব প্রকাশনা বন্ধ করতে চাইলে আমাকে অনেক টাকা দিতে হবে বলে জানায়। মান সন্মানের ভয়ে আমি তাকে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছি বিভিন্ন সময়ে। এরপরও সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে হুমকি দিতে থাকে।

একপর্যায়ে আবারও টাকা দাবি করে। বিষয়টি আমি পুলিশকে অবগত করি। অত:পর পুলিশের পরামর্শে কাইয়ুমকে আবারও টাকা দেব বলে জানাই। টাকা হস্তান্তরের স্থানটি পুলিকেও জানাই। পুলিশ ২০০ ডলারসহ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমার প্রকাশিত দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকাটি ছিল প্রকাশনার শীর্ষে। সেই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খায়রুল আলম রফিকের সাথে আমার বিভেদ তৈরি করে এই কাইয়ুম। অনেক পরে বিষয়টি আমি বুঝতে পাই। ততক্ষনে রফিকের মত পত্রিকাটিও আমার থেকে দূরে চলে গেছে।

‌আস/এসআইসু

Facebook Comments Box