আলোকিত সকাল ডেস্ক
আশপাশে ফুট ওভারব্রিজ কিংবা জেব্রাক্রসিং থাকার পরও ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হওয়ার দৃশ্য রাজধানীতে নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল মহাখালীর আমতলী এলাকা থেকে তোলা ছবি। ছবি : কালের কণ্ঠ
অ- অ অ+
রাস্তা পারাপারে নিয়ম-নীতি থাকলেও নিরাপদে সড়ক পারাপারে নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এ অবস্থায় পথচারীরা ইচ্ছা-খুশি মতো রাস্তা পারাপার হচ্ছে। আবার কখনো বাধ্য হয়ে, কখনো বা অভ্যাসবশত অমান্য করছে ট্রাফিক আইন। ফুটপাত নয়, রাস্তা ধরে অনেকে হাঁটতে থাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে। হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে। দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে সামনে পড়ে যায় চলন্ত যানবাহনের। এ অবস্থায় কখনো পথচারীকে বাঁচাতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে যানবাহনের চালক। আবার কখনো পথচারী নিজেই হয় দুর্ঘটনার শিকার। তবে আইনি পদক্ষেপে পথচারীকে কখনো দায়ী করা হয় না। সব মিলিয়ে রাস্তা পারাপারে বেড়েই চলেছে খামখেয়ালিপনা। জটিল এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুলিশ খুঁজছে সমাধানের পথ। সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচির পাশাপাশি ‘অবাধ্য পথচারী’কে শায়েস্তা করতে নেওয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ। গ্রেপ্তারসহ আইনি কঠোর পদক্ষেপের কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। সচেতনতা তৈরির নানা পদক্ষেপ, প্রচারণা, এসবেও কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। এখন থেকে কোনো পথচারী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে বিচিত্র অভিযোগ, অনুযোগ। কেউ বা বলছে, হেঁটে চলাচলের ব্যবস্থা নেই, ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। আবার কেউ বলছে, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার অযোগ্য, পর্যাপ্ত জেব্রাক্রসিং নেই, যেখানে ব্যবস্থা আছে সেখানে যানবাহন থামাতে নেই ট্রাফিক পুলিশ—এমন নানা কথার পাশাপাশি অনেকে স্বীকার করেছে, অভ্যাসবশত ও অন্যের দেখাদেখি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করে তারা ‘অপরাধ’ করছে।
গুলশানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘ফুটপাত তো হকারের দখলে। নিয়ম মানুন বললেই তো হলো না। পরিবেশ কোথায় নিয়ম মানার? রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা নেই। যেখানে আছে, সেখানে তো মেনেই চলি।’
পথচারীদের বক্তব্য, নিরাপদ ব্যবস্থা থাকলে কেউ জানবাজি রেখে রাস্তা পার হবে না। পুলিশ অনেক স্থানে জোর করে পথচারীদের ফুট ওভারব্রিজে তুলতে চায়। কিন্তু সেখানকার পরিবেশ নিয়ে তাদের পদক্ষেপ নেই। ওই দায়িত্ব নাকি সিটি করপোরেশনের। আবার ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে দল বেঁধে রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা মেলে কম। পুলিশ সেখানে যানবাহন থামাতে যখন বিলম্ব করে তখন মানুষ নিজ দায়িত্বে দৌড়ে রাস্তা পার হয়। কিছু ক্ষেত্রে পথচারীদের বাড়াবাড়ি থাকলেও রাস্তা পারাপারে নগরীতে মূলত এখনো কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীতে ফুট ওভারব্রিজের সংখ্যা ৮৯, যার বেশির ভাগই অব্যবহৃত। অসুস্থ নারী-পুরুষ, প্রতিবন্ধী, শিশু ও বৃদ্ধ, ভারী ব্যাগ ব্যবহারকারীদের জন্য এগুলো উপযোগী নয়। অন্য যারা তারাও আগ্রহী নয় উচ্চতাসহ ফুট ওভারব্রিজের পরিবেশের কারণে। রাজধানীতে দুটি ফুট ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি লাগানো হলেও একটি অচল হয়ে আছে। এর বাইরে পথচারীদের ব্যবহারে তিনটি পাতালপথ ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানেও পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন আছে। রাস্তা পারাপারে সবচেয়ে জরুরি ও সহজ ব্যবস্থা জেব্রাক্রসিং। রাজধানীতে যেসব স্থানে জেব্রাক্রসিং আছে, সেগুলোর ব্যবহার কম। অনেক স্থানে দাগ মুছে গেছে। দূর থেকে বোঝা মুশকিল। হেঁটে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা খুবই কম স্থানে রয়েছে। ফলে যে যেভাবে পারছে, রাস্তা পার হচ্ছে।
এদিকে ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, ফুটপাত হকারদের দখলে—এ অজুহাত জুড়ে দেয় অনেকে। কিন্তু রাজধানীর বহু রাস্তায় ফুটপাত খালি থাকলেও পথচারীদের দেখা মেলে কম। রাস্তা দিয়েই হাটছে তারা। তাঁরা বলছেন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানে ট্রাফিক আইন থাকলেও পথচারী নিয়ন্ত্রণে বিধান নেই। এর ফলে দুর্ঘটনার পর পথচারীর দোষ ধরা হয় না।
সম্প্রতি কয়েকটি বড় দুর্ঘটনায় পথচারীদের ভূমিকা ধরা পড়েছে তদন্তকালে। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয়েছে, যানবাহনচালকের অপরাধের পাশাপাশি পথচারীর অবস্থানও ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এর বাইরে গণমাধ্যমেও নানা সময়ে প্রকাশ পেয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপারের চিত্র।
আস/এসআইসু