নানা কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। একদিকে দেদার বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, অন্যদিকে খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। মাঠে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করায় বিষাক্ত হচ্ছে ফসল। ফল পাকানো হচ্ছে কৃত্রিমভাবে, ক্ষতিকর কেমিক্যালের সাহায্যে। ফরমালিন দিয়ে মাছ-মাংস এমনকি শাকসবজিও তাজা রাখা হচ্ছে। এ সবকিছুই জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। দীর্ঘ, এমনকি স্বল্প মেয়াদেও এসব বিষাক্ত খাদ্য দেশের মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ। এমনকি রাজধানী ঢাকার ওষুধের পাইকারি মার্কেটেও পাওয়া গেছে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। এ অবস্থায় রাজধানীতে সম্প্রতি এক কর্মশালায় তুলে ধরা তথ্য হচ্ছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের সূচকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার যখন এই অবস্থা, তখন উচ্চ আদালত থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ নির্দেশ এসেছে। সারা দেশে বিভিন্ন ফার্মেসিতে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ এক মাসের মধ্যে অপসারণ ও ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি, সংরক্ষণ ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, আইন, বাণিজ্য ও শিল্পসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ কার্যকরের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমসহ সব ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ২০ মে এক আদেশে ঢাকাসহ সারা দেশে ফলের বাজার ও আড়তে আমসহ যেকোনো ফল পাকাতে ও সংরক্ষণে যাতে কেউ কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করতে না পারে, তা তদারকির জন্য মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ এসেছিল উচ্চ আদালত থেকে। ওই আদেশে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি), র্যাব মহাপরিচালক, বিএসটিআই চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট পরিচালককে সাত দিনের মধ্যে এই মনিটরিং টিম গঠন করতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৮ জুনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশনা ছিল। এ নির্দেশের পর বিএসটিআই ও র্যাবের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
খাদ্য বিষমুক্ত করতে না পারলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। অন্যদিকে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিপণন বন্ধ করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আস/এসআইসু